খাত সংশ্লিষ্ট এবং ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, বার্ষিক ফি বাবদ ব্যবসায়ী অপারেটরদের দেয়া মোটা অঙ্কের ভার বহন করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
সম্প্রতি এক সেমিনারে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরীর উপস্থাপন করা তথ্যানুসারে, যে কোনো বাল্ক এলপিজি ব্যবসায়ী অপারেটরকে ব্যবসায়ের জন্য ১৩টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে লাইসেন্স বা তা নবায়নে বার্ষিক মোট প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ফি দিতে হয়।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বন্দরে নতুন এলপিজি টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা বিপিসির
সংস্থাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) (প্রস্তাবিত) ২৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) ৪০ হাজার টাকা, পরিবেশ অধিদপ্তরকে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) ১২ লাখ চার হাজার ১৫৮ টাকা, বিস্ফোরক বিভাগকে এক লাখ ১৬ হাজার টাকা, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) ২৫ লাখ টাকা এবং সিটি করপোরেশন/স্থানীয় সরকার সংস্থাকে ৯৩ হাজার ৭৬০ টাকা করে ফি দিতে হয়।
এছাড়া, অন্যান্য সংস্থার মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে (ডিআইএফই) তিন লাখ ২০ হাজার টাকা, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে (সিসিআই এবং ই) ৬১ হাজার টাকা, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে (ডিসিসিআই) ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধককে (আরজেএসসি) দুই লাখ ৭৬ হাজার টাকা (অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা বিবেচনায়) ফি দিতে হয়।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য প্রস্তুত হতে পারে ২০২৩ সালে
সম্প্রতি বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানিতে ছয়টি বড় বেসরকারি এলপিজি সংস্থার কর্মকর্তারাও বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। সেই সাথে তাদের ব্যবসা নিরীক্ষণের জন্য একক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এবং প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) প্রবর্তনের দাবি করেছেন।
একই ধরনের অভিযোগ করে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনে নেতা হাসিন পারভেজ বলেন, এলপিজি এবং সিএনজি ব্যবসার নিবন্ধন নিতে তাদের ২২টি সংস্থাকে ফি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হলো জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিস, বিপিসি বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বা অনুমতি চাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সিরিয়াল নেই। একবার কেউ ডিসি’র কাছে আবেদন করলে ডিসি অফিসের কর্মকর্তারা আবেদনকারীকে প্রথমে অন্যান্য সংস্থার লাইসেন্স নিয়ে তারপরে আবেদন করতে বলেন।
আরও পড়ুন: এগিয়ে চলছে মাতারবাড়ী বন্দরের নির্মাণ কাজ
‘যখন অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে যাই তখন তারা প্রথমে ডিসি অফিসের অনুমতি আনতে এবং পরে তাদের কাছে আবেদন করার কথা বলেন,’ উল্লেখ করেন তিনি।
এই অভিযোগের সাথে একমত প্রকাশ করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ভোক্তা অধিকার সংস্থাও জ্বালানি খাতে একক নিয়ন্ত্রকের কথা বলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরাও একই মত দিয়েছি। একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবসার ক্ষেত্রে কেবল জটিলতা তৈরি করে এবং ব্যয় বাড়াচ্ছে যা জ্বালানি মাসুলের ওপর প্রভাব ফেলে এবং দিন শেষে এর জন্য গ্রাহকদের মূল্য দিতে হয়।’
আরও পড়ুন: এলপিজির মূল্য নির্ধারণে কমিটি গঠন সম্পর্কে জানতে চায় হাইকোর্ট
তাদের মতামতের প্রতিধ্বনি করে বিইআরসির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধাসহ একক ও প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত যারা অন্যান্য সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করবে।
তিনি বলেন, বিইআরসি লাইসেন্সের আবেদনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয় নথির সংখ্যা কমিয়ে ইতোমধ্যে জ্বলানি ব্যবসার জন্য বেশকিছু প্রক্রিয়া সহজ করেছে।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, তবে এখনও জ্বলানি খাতে ব্যবসাকে সহজ করার জন্য আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।
গ্রাহকদের ক্ষতি না করে যৌক্তিকভাবে ফি নির্ধারণের পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে ক্রেতারা